ময়মনসিংহের আবুল মনসুর সড়ক হাট ঘুরে: হাট ভাঙেনি তখনো। কিন্তু ক্রেতা না থাকায় মন ভেঙেছে গৃহস্থ আবুল কালাম ও মকবুল হোসেনের। তারাকান্দা বাজার এলাকার বুড়ো-জোয়ান এই দু’গৃহস্থ হাটের সড়কের পাশে খড় বিছিয়ে বসে আছেন। চোখে-মুখে অনিশ্চয়তা। আছে চাপা কষ্টও। একই উপজেলা থেকে আসা গৃহস্থ তোতা মিয়া ও হারুনের কষ্টের গল্প আরো করুণ।
বিক্রি না করতে পেরে মাঝারি আকারের দু’টি ষাঁড় ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন। ঘণ্টা পাঁচেক খুঁটিতে গরু বেঁধে রাখলেও বিক্রি করার ভাগ্য হয়নি।
নিজেদের কষ্টগাথা বর্ণনা করে সোহরাব মিয়া নামে সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি এলাকার এক ব্যাপারি জানালেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এসেছেন এ হাটে। আসার সময় নিজের ছোট ছেলের হাতে একশ’ টাকা গুঁজে দিয়ে এসেছেন। আধা কেজি চিনি আর আটা কিনতে বলেছেন। অবিক্রিত গরু বাড়ি ফেরত নেওয়ার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন আর নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ হাটে গিয়ে ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে এমন আরো অনেক ব্যাপারির দেখা মিললো।
বেশিরভাগ ব্যাপারি জানালেন, আশেপাশে আরো হাট থাকায় এবার সার্কিট হাউজ এলাকার হাট খুব একটা জমেনি। অনেক ব্যাপারি সস্তায় গরু বিকোতে চাননি।
রাত ৮টার পর অনেকটাই ক্রেতাশূন্য হয়ে উঠে হাটটি। হাটের এমন করুণ অবস্থার কারণ সম্পর্কে গৃহস্থ মকবুলের ভাষায়-‘ঢাকার হাটে ইন্ডিয়ান গরু না আইলে এ শহরের গরু যাইতো। আর এইটাই আমগরে খাইছে।’
হাটঘুরে দেখা গেলো, আবুল মনসুর সড়কের কোথাও গরু নেই। তবে কাঁচারি সড়কের আশেপাশে প্রায় দু’শতাধিক গরু অবিক্রিত অবস্থায় রয়ে গেছে।
আর হাটের ইজারাদার ময়মনসিংহ পৌরসভার সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান দাবি করেন, হাটে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) মাত্র ৫’শ থেকে ৬’শ গরু বিক্রি হয়েছে।
সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) মাত্র ৪০ থেকে ৫০ ভাগ গরু বিক্রি হয়েছে। আর ৫০ ভাগ গরু ফেরত গেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, আশেপাশে অনেক অবৈধ হাট বসেছে। এ হাটে ষাঁড়ের (হাসিল) ভয়ে ক্রেতারা আসেনি। মাত্র ২’শ থেকে ৩’শ টাকা কমে তারা ছোটখাটো হাট থেকে গরু কিনেছেন। ডাকের ৭০ পার্সেন্ট টাকা উঠবে। ৩০ ভাগ টাকা লোকসান গুণতে হবে।